রোহিঙ্গাদের না ফেরালে ঝুঁকি সারাবিশ্বের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১২ নভেম্বর, ২০২১, 11:18 AM
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১২ নভেম্বর, ২০২১, 11:18 AM
রোহিঙ্গাদের না ফেরালে ঝুঁকি সারাবিশ্বের
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরাতে না পারলে বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত প্যারিস শান্তি সম্মেলনে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এ ইস্যুতে শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্যারিস পিস ফোরাম 'মাইন্ডিং দ্য গ্যাপ :ইমপ্রুভিং গ্লোবাল গভর্ন্যান্স আফটার কভিড-১৯' শিরোনামে এই সম্মেলনের আয়োজন করে। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
শেখ হাসিনা বলেন, '২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দিয়ে বড় ধরনের আঞ্চলিক সংকট এড়াতে সহায়তা করেছে বাংলাদেশ। তাদের মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। এই মানুষদের দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে বিশ্বকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে এ সংকট থেকে উদ্ভূত নিরাপত্তা ঝুঁকি শুধু আমাদের সীমান্তেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা এর মধ্যেই তার আলামত দেখেছি।'
এর আগে একই দিন প্যারিসে ইউনেস্কোর ৪১তম সাধারণ সম্মেলনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি ইউনেস্কোকে দূরশিক্ষণ এবং অনলাইন শিক্ষাকে বৈশ্বিক জনসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানান। অনলাইন শিক্ষা কভিড-১৯ মহামারি চলাকালে একটি নতুন স্বাভাবিকতা হিসেবে বিকশিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি ইউনেস্কোকে সরকার, বেসরকারি খাত এবং অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে অংশীদারিত্ব এবং সম্পদ জোগানোর জন্য অগ্রাধিকারের বিষয় হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। মহামারি কষ্টার্জিত অর্জনগুলোকে ক্ষুণ্ণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বড় ত্রুটি প্রকাশ করেছে।'
শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটালাইজেশন, উন্নত পরিষেবা এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ বেড়েছে; তবে ক্ষতিকারক বিষয়বস্তু এবং ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ডিজিটাল সরঞ্জাম এবং প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ইউনেস্কোর মতো বিশ্ব সংস্থাগুলোকে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করা উচিত।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়; বিশ্বের আরও অনেক দেশের জন্যই একটি প্রাণঘাতী বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রথম 'ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান' পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন। প্রথমবারের মতো সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য এই আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে উগান্ডার প্রতিষ্ঠান এমওটিআইভি ক্রিয়েশনস লিমিটেড। প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের কাছে পুরস্কার ও প্রশংসাপত্র তুলে দেন।
ফ্রান্সের সিনেট পরিদর্শন :ফ্রান্স সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির আইনসভা সিনেট ভবন ঘুরে দেখেছেন। এ সময় তিনি সিনেটের বাংলাদেশবিষয়ক গ্রুপের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন। ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার মোহাম্মদ তালহা প্যারিসে সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রধানমন্ত্রী বুধবার ফ্রান্সের সিনেটে গেলে আইনসভার সদস্যরা উঠে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানান। পরে তার ভূমিকা ও নেতৃত্বের প্রশংসা করে একটি মানপত্র পাঠ করা হয়।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো এবং লন্ডন সফর শেষে ৯ নভেম্বর প্যারিসে যান শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোন এবং প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ কাসতেক্সের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, 'এই পর্যায়ের সফর আমাদের জানামতে এর আগে কখনও হয়নি। এ সফরে যে বিরল সম্মান প্রধানমন্ত্রীকে দেখানো হয়েছে প্রথম দুই দিনে, সেটা এর আগে কখনও হয়নি।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ফ্রান্সে একাধিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে প্যারিস সফরের প্রথম দিনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের প্রাসাদে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান প্রেসিডেন্ট মাক্রোন।
আগামী ১৪ নভেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রীর দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
ঢাকা ও প্যারিসের মধ্যে ৩ চুক্তি :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফর চলাকালে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স আর্থিক সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা-সংক্রান্ত তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, ফ্রান্স বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ৩৩০ মিলিয়ন ইউরো দেবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বুধবার সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ৩৩০ মিলিয়ন ইউরোর মধ্যে এজেন্সি ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট (এএফডি) মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আর্থিক সহায়তার জন্য ২০০ মিলিয়ন ইউরো দেবে এবং ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাস্টেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের জন্য দেবে ১৩০ মিলিয়ন ইউরো। প্রকল্পটি এরই মধ্যে চালু করা হয়েছে এবং তা চলছে।
তিনি বলেন, এ নিয়ে বাংলাদেশকে এএফডির দেওয়া মোট সহায়তা এক বিলিয়ন ইউরো ছাড়াল। এর আগে সংস্থাটি ৮০০ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হচ্ছে এএফডির সবচেয়ে বেশি সহায়তাপ্রাপ্ত দেশ।
এ ছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মচারীদের জন্য অভিজ্ঞতা বিনিময় ও প্রশিক্ষণের জন্য সহযোগিতা জোরদারে ফ্রান্সের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তিনি আরও বলেন, তারা বিমান পরিবহন নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করছে। এতে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে।